মেয়াদ বাড়িয়ে প্যাকেজ কমানোয় বিষয়ে আপত্তি, বিটিআরসিতে যাবেন অপারেটরদের প্রধানরা!

মেয়াদ বাড়িয়ে প্যাকেজ কমিয়ে বিটিআরসির নতুন ডেটা নির্দেশিকা মানতে চাইছে না মোবাইল ফোন অপারেটররা।

আর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার বিটিআরসি কার্যালয়ে যাচ্ছেন মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সিইওরা। ওই বৈঠকে বিটিআরসি চেয়ারম্যানসহ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা থাকার কথা রয়েছে।

গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে ডেটা প্যাকেজ ছাড়াও খাত সংশ্লিষ্ট আরও আলোচনা হতে পারে।

বিটিআরসি এই ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন ডেটা নির্দেশিকা ঘোষণা করে। ওইদিন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী এই নির্দেশিকা উম্মোচন করেন।

যা ১৫ অক্টোবর হতে কার্যকর করার কথা।

নতুন নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে, স্পেশাল ডে প্যাকেজের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৭ দিন করা, আগে এটি ছিল ৩ দিন।

অপারেটর যে প্যাকেজেই দিক না কেনো তার মেয়াদ হবে ৭ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড। আগে এটি ছিলো ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন এবং ৩০ দিন। যেখানে ডেটা ভলিউম সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনাও ছিল।

একটি অপারেটরের নিয়মিত, বিশেষ, রিসার্চ ও ডেভেলমেন্ট, সব ধরনের ব্র্যান্ড (গ্রামীণফোন, স্কিটো, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ইত্যাদিসহ যা আছে) মিলিয়ে প্যাকেজের সংখ্যা হবে ৪০টি। আগে এটি ছিলো ৮৫টি।

কী বলছে মোবাইল অপারেটররা ?

অপারেটররা বলছে, নতুন এই নির্দেশিকায় গ্রাহকদের পছন্দের স্বাধীনতা কমেছে। এছাড়া তাদের বিপুল সংখ্যক গ্রাহক কম মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহারের সুযোগ হতে বঞ্চিত হবে। আর অপারেটরদের ডেটা হতে আয়েও এর প্রভাব পড়বে।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘ইন্টারনেট সেবা গ্রহণে মানুষের চয়েজ কমে যাবে। গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে দামেও। নতুন নির্দেশিকার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ তিনি দেখছেন না।’

মোবাইল অপারেটরগুলোর পক্ষে তাদের সংগঠন এমটব এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে।

সংগঠনটির মহাসচিব লে: কর্নেল মোহাম্মদ জুলফিকার (অবঃ) বলেন, ‘মোবাইলের প্যাকেজ ডিজাইন করা হয় বিভিন্ন স্তরের গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে। কারণ একজন শিক্ষার্থী অথবা একজন নিম্ন আয়ের মানুষের মোবাইল ব্যবহারের প্যাটার্ন আর একজন ব্যবসায়ীর মোবাইল ব্যবহার এক নয়।’

‘দেশের নিম্ন আয়ের যে ৪৫ শতাংশ মানুষ এখনও মোবাইলের আওতায় আসেনি তাদের এই সেবার মধ্যে নিয়ে আসতে চান তারা। এজন্য সেসব মানুষদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দরকার। এছাড়া প্যাকেজ সঙ্ক্রান্ত সর্বশেষ নির্দেশনাটি মাত্র বছর খানেক আগে দেয়া হয়েছে। মার্কেটে তার ব্যবহারিক প্রভাব কি তা এখনও পুরোপুরিভাবে পরীক্ষিত নয়। এখন আবার প্যাকেজ সংখ্যা ও তার সময় নিয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হলো।’ বলছিলেন তিনি।

মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, ‘তারা মনে করেন এই পরিবর্তনের প্রভাব পুরো খাতে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণেও পড়তে পারে। উপরন্তু সরকার বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে থেকে যদি সেবা সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসতেই হয়, তাহলে অবশ্যই তা অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামতের ভিত্তিতে করাটাই শ্রেয়।‘

সরকার ও বিটিআরসি এই প্রয়োজন অনুধাবন করবে এবং সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশা করেন তিনি।

কী বলছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ?

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি তা তাদের মানতে হবে।

‘এটা এক বাক্যে সিম্পল বিষয়, ৩ দিনে অতিরিক্ত ডেটার এক ধরণের লোভনীয় অফার তৈরি করে তারা। সেটা কোনো ইউজারই ইউজ করতে পারে না। ফলে এটা একটা প্রতারণার ফাঁদ।’ বলেন তিনি।

নতুন নির্দেশিকায় গ্রাহকের পছন্দের স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি মানুষ ৩ দিনের ডেটা ব্যবহার করেন এবং এটা বন্ধের ফলে রাজস্বেও প্রভাব পড়বে-অপারেটরদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরণের কথা অপারেটররা অনেকবার আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে। আমরা এগুলো সব শুনে, সব কিছু বুঝে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার মতামত নিয়ে সবকিছু কমপ্লিট করে তারপর সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এটা চট করে, হুজুগের মাথায় আমরা একটা সিদ্ধান্ত দেইনি।’

অপারেটরগুলো যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করে তাহলে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

নির্দেশিকায় আরও যা পরিবর্তন :

মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। এতে একই ভলিউম এবং একই কন্টেন্টের ৭ বা ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহক ওই প্যাকেজ আবার কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০ জিবি ডেটা পর্যন্ত।

কমানো হয়েছে প্রমোশনাল এসএমএসের সংখ্যাও। আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪ টি এসএমএস দিতে পারত অপারেটররা, এখন দিতে পারবে ৩টি।

গ্রাহক তার পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডেটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস ঠিক করে ‘ফ্লেক্সিবল প্ল্যান’ হিসেবে নিজে একটি নিয়মিত প্যাকেজ তৈরি করতে পারবে। প্রদর্শিত মূল্য গ্রাহকের পছন্দ হলে নিজেই তার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্যাকেজটি গ্রহণ করতে পারবে এবং এটি একটি রেগুলার প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে।

অপারেটররা ৩টি আলাদা ভলিউমের আনলিমেটেড প্যাকেজ অফার করতে পারবে। শুরুতে ২৫ জিবি, ৫০ এবং ৭৫ জিবি হবে। অর্থাৎ উক্ত তিনটি ভলিউমের যেকোনো একটি আনলিমিটেড প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে। পরে বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে ভলিউম পরিবর্তন করা যাবে।

ডেটা শেষ হওয়ার আগে গ্রাহককে জানাবে মোবাইল অপারেটর। একজন গ্রাহককে প্যাকেজের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে নতুন প্যাকেজ অফার দিলে অফারটি অবশ্যই একই প্যাকেজ হতে হবে এবং অন্য দুটি প্যাকেজ তার ব্যবহারের প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করে হবে। যেকোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগে গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে ডেটা মেয়াদ শেষ হওয়ার নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। অব্যবহৃত ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও মেয়াদ শেষ হওয়ার চলতি প্যাক পুনরায় কেনার নিদের্শনা ওই এসএমএস এ থাকবে।

 

© টেকশহর

 

আমাদের ফেসবুক কমিউনিটি গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন → গ্রুপ → MOCB

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Press ESC to close